প্রচলিত ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে ইসলামের ভাষ্য
এইচ এম জহিরুল ইসলাম মারুফ
ভালবাসা মহান প্রভুর এক বিশাল নিয়ামত। এ নিয়ামত না পেলে আল্লাহ বান্দাকে, বান্দাহ আল্লাহকে, নবী করীম সা. উম্মতকে, উম্মতগণ নবী করীম সা. কে, পিতা-মাতা সন্তানকে, সন্তানগণ পিতা-মাতাকে এককথায় আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তিদের জায়েজ ভালবাসা হতে বঞ্চিত হতো।
তাইতো এই ভালবাসা হওয়া চাই প্রভুর সন্তুষ্টির জন্য। হাদিসে নববীতেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ আমল হল- আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালবাসা এবং তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য কারো সাথে শত্রুতা রাখা। [আহমদ, মুসনাদুল আনসার হাদিস নং ২০৩৪১]
কিন্তু মহান প্রভুর ভালবাসার সাথে অপবিত্র ও নেতিবাচক কোন কিছুর সংমিশ্রণ হলে তা আর ভালবাসা থাকে না। বরং হয়ে যায় ছলনা, শঠতা, ও স্বার্থপরতা। বস্তুত সেই ভালোবাসাটাই সমাজে ব্যাপকহারে প্রচলিত। আর এই ছলনা, শঠতা ও স্বার্থপরতার জ্বালে পড়ে নারী-পুরুষ উভয় জাতিই ধ্বংসের পথে পা বাড়াচ্ছে। যা আমরা প্রতিনিয়তই খবরের কাগজে পড়ে থাকি।
কেউ সুখি সংসার ছেড়ে জৈবিক চাহিদা মেটাতে অন্যের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে। কেউ আবার প্রতিপত্তির লোভে অবৈধ ভালবাসায় আটকে গিয়ে সবকিছুই হারিয়ে পথের ভিখারী হয়। নতুবা একে অপরের প্রতি মাথা নত করে সারাটা জীবনপাড় করতে হয়; দুঃখ ও অশান্তি নিয়ে।
অথচ হালাল ভালোবসায় থাকে না কোন ছলনা, হিংসা এবং অশান্তি। হালাল ভালবাসা বলতে পূর্বে উল্লেখিত হাদিসে বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহ তাআলাও বলে দিয়েছেন। কুরআনে পাকে এসেছে-‘তোমরা (স্বামী-স্ত্রী) একে অপরের পোষাক স্বরুপ’।[সূরা বাকারা]
অতপর প্রকৃত ভালবাসা উপেক্ষা করে হারাম ভালবাসায় ঝুঁকে বর্তমান রুপধারণ করায় ২৭০ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী হতে এ পর্যন্ত এই বেহায়াপনা চলে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকতায় পালন করা হয় ১৯৯৩ইং সালে।
তথাকথিত রোম সম্রাট ক্লডিয়াস ভ্যালেইন্টাইন নামে একজন সাধু, তরুণ প্রেমিকদের গোপন পরিণয়-মন্ত্রে দিক্ষা দিত। এ অপরাধে ভ্যালেন্টাইন নামের এক সাধূ-তরুণ প্রেমিকের শিরশ্ছেদ করেন। এখান থেকেই ভ্যালেন্টাইন প্রেমিরা উক্ত দিনটিকে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বা বিশ্ব ভালবাসা দিবস হিসাবে পালন করে আসে।
তবে মুসলিম জাতি এ বিজাতীয় সংস্কৃতি পালনের ফলে দুনিয়া ও আখেরাতের চরম তিক্ত স্বাদ এবং শাস্তি ভোগ করতে হবে। পরকালিন শাস্তির মধ্যে যা উল্লেখযোগ্য-নবী করীম সা. ইরশাদ করেন, ‘তুমি যাকে ভালবাস, তার সাথেই তোমার হাশর হবে’। অন্য বর্ণনায় আছে, নবী করীম সা. ইরশাদ করেন-‘যে যাকে ভালবাসে, সে পরকালে তার সাথেই থাকবে’। [সহিহ মুসলিম]
আর দুনিয়ার ক্ষতি ও শাস্তির মধ্যে রয়েছে-
১.তরুণ-তরুণিদের সস্তা যৌন আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে সমাজে ফাসাদ সৃষ্টি হয়। যার কারণে পারিবারিক জীবন থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিশপ্ত জীবন তছনছ হয়ে যায়।
২.নৈতিক অবক্ষয় অগ্নিশিখার মত চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
৩.নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা উম্মোচিত হওয়ায় ঈমানদারদের সমাজে এ ধরণের অশ্লিলতা প্রকাশ পায়। যার জন্য মহান প্রভু তৈরি করে রেখেছেন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- ‘যারা মুমিনদের মাঝে অশ্লিলতা কামনা করে, তাদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। [সূরা নূর : ১৯]
৪.যুবক-যুবতিরা বিবাহের পূর্বে দৈহিক সম্পর্ক গড়তে কোন রকম কুণ্ঠাবোধ না করায় অবৈধ ভালবাসার রুপ গভীরে চলে যাচ্ছে। লাগামহীন এই যৌন সম্পর্কের কারণে মরণব্যাধি এইডস, পিবোলা ও ক্যান্সারসহ নানা রোগে ভুগতে হয়। যার ফল লাঞ্চনাদায়ক মৃতূও হয় অনেকের।
৫.শরীরে উল্কি আঁকাতে নিজের সম্ভ্রম পর পুরুষকে দেখানো হয়। যে কোন পার্লারে “যে ব্যক্তি উল্কি আঁকে এবং যার গায়ে তা আঁকা হয়, উভয়ের উপর আল্লাহর লা’নত বর্ষিত হয়”। [সহিহ বুখারি শরিফ]
‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ সম্পর্কে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের ফতোয়া হলো, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালন নিষেধের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এটি খ্রিষ্টানদের উৎসব। যে মুসলমান আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার জন্য এ কাজ করা বা এই দিনে কাউকে ফুলসহ অন্যকিছু উপঢৌকন বৈধ নয়।
বরং তার কর্তব্য হল আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের সা. হুকুম পালন করা। আল্লাহর শাস্তি ও গযব আসে এমন কাজ থেকে নিজে দূরে থাকা। অন্যকেও দূরে রাখা। এ সমস্ত কাজের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সা. নাফরমানি করা হয়।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে সঠিক দীন বুঝে অশেষ নিয়ামত জান্নাত লাভ করার তৌফিক দিন। পাশাপাশি বাতিলদের বুঝানোর জ্ঞান দিন। যাতে করে তারাও জান্নাত হতে মাহরুম না হয়। আমিন!!
লেখক-
এইচ এম জহিরুল ইসলাম মারুফ,
শিক্ষার্থী-তাকমিল(মাস্টার্স ডিগ্রি-ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবী)।
(জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম দিলুরোড-আরবী বিশ্ববিদ্যালয়-নিউ ইস্কাটন,হাতিরঝিল,ঢাকা-১০০০)